top of page

প্রতিচ্ছবি-জয়াশিস দত্ত

বাসের সজোরে হর্নটা আমার অন্যমনস্কতাটাকে ভেঙে দিল। তড়িঘড়ি করে কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞাসা করলাম, হাওড়া যাবে কি না। উত্তরে সে তার মাথাটা নাড়িয়ে অসঙ্গতি প্রকাশ করল। গত দু'বছর ধরেই গোটা বিশ্ব যেন আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এক জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে। আমি জানি না এর শেষ কোথায়। আজ আমার একটা চাকরির ইন্টারভিউ ছিল। গত সাতটা কোম্পানির মতো এটাও আমার বিরুদ্ধে ওই জঘন্য খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। চারপাশটা ক্রমশ ফাঁকা হয়ে আসছে। ঘড়িতে প্রায় দশটার ঘর ছুঁইছুঁই। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম — এত অন্ধকারেও সেটাকে লাল দেখাচ্ছে। প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেল বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। কোনো উপায় না দেখে একটা ট্যাক্সিতে চড়ে বসলাম। যদিও আমার বর্তমান পরিস্থিতি এই আড়ম্বরপূর্ণ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ প্রতিকূলে।

ট্যাক্সিতে উঠতেই মানিব্যাগটা একবার হাতড়ে দেখলাম, মাত্র ৩০০ টাকাই পড়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম, সল্টলেক থেকে হাওড়া … এই টাকাতেই হয়ে যাবে। ট্যাক্সি হাওড়ামুখী রওনা দিল; কিছুক্ষণ চলার পর, হঠাৎ করে বাড়ির কথা মনে পড়ল। আজও তাঁরা হয়তো ভালো খবরের আশায় আছে, কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারেও তাদের সেই আশাকে আমি নিমেষে ভণ্ড করে দেবো। সামনের সিগন্যালে আচমকা গাড়িটা থেমে যাওয়ায় আমার এই ভাবনায় ইতি টানল। সঙ্গে সঙ্গে মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হ'ল।

জানলার কাঁচটা তুলে দিতেই গাড়ির ভিতরটা যেন এক আশ্চর্য নীরবতায় ছেয়ে গেল। শুধুমাত্র গাড়ির ওয়াইপারটা সেই নীরবতাকে ক্রমশ ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মনটা ভার হয়ে গুমরে আছে।


চোখটা জানলার কাঁচটার দিকে পড়তেই দেখলাম, বৃষ্টির কণারা ক্রমাগত কাঁচের গায়ে দাগ কেটে চলেছে; জলকণা বাসা বেঁধেছে সেখানে। বাইরেটা ক্রমশ আবছা হয়ে আসছে আমার কাছে।

আমার ভবিষ্যৎটা যেন ঠিক তারই প্রতিচ্ছবি।

bottom of page