কলস বা কলসি-সুধেন্দু আচার্য
Updated: Aug 20, 2020
কলসি, ঘড়া, গাগরি, কুম্ভ , যে নামেই ডাকি না কেন , জীবন যাপনের অসম্ভব প্রয়োজনীয় এই বস্তুটির ব্যবহার আজ ক্রমশ কমে যাচ্ছে । হয়তো এখনো পর্যন্ত যতটুকু আছে , সেটুকুও বিলুপ্ত হবে একদিন ।
কেবল মাত্র ঠাকুর ঘরেই হয়তো বা তাদের দেখা যাবে।
বিবাহ - উৎসবে ' জল- সইতে' শহরে এখন ঘড়া লাগে না , 'ঘটিতেই কাজ হয়ে যায়।
অথচ এই কলসি অপরিহার্য ছিল পানিয় জল বহন করে আনার জন্য । দূর, বহুদূর থেকে কলসি কাঁখে,গাঁয়ের বধূ মেঠো পথ বেয়ে জল নিয়ে যেত । তাই দেখে কত কবি কত কবিতাই না লিখেছেন ---
"
পাশ দিয়ে নিয়ে জল , আঁখি দুটি ঢল ঢল
কুল বধূ দ্রুত গেল লাজে চমকিয়ে
"
নিধুবাবু লিখলেন --------
'কাদের কুলের বউ গো' - টপ্পা গান
কথা-রামনিধি গুপ্ত
শিল্পী-রামকুমার চট্টোপাধ্যায়
"
যমুনায় জল আনতে যাচ্ছ(ওগো)।।
সঙ্গে নেই তো কেউ;
তুমি কাদের কুলের বউ গো,
যাচ্ছ তুমি হেসে হেসে।।
কাঁদতে হবে অবশেষে,
আর কলসী তোমার যাবে ভেসে
ওই লাগলে জলের ঢেউ।
আরে লাগলে প্রেমের ঢেউ
"
শ্রী রাধিকার সঙ্গে কলসির যোগাযোগটা ছিল চাঁদ ও চকোরের মত । একটা ছেড়ে আর একটা ভাবা যায় না।
যমুনার জলে গাগরি ( কলস) ভাসিয়ে রাধা ভুলে যায় জল আনার কথা । দূরে তমালের ডালে বসে থাকা শ্যামের মোহন বাঁশির আকুল করা সুরে রাধা আবিষ্ট হ'য়ে ভুলে যায় , স্বামী, ঘর সংসার,সমস্ত জগৎ ... কলসি ভাসতে , ভাসতে চলে যায় দূরে বহুদূরে ।
কলস কাঁখে শ্রীরাধার রূপ বর্ণনায় বৈষ্ণব কবিদের তুলনা নেই । নজরুল ইসলামও কিছু কম লেখেন নি

"
গাগরী ভরণে চলে চপলা ব্রজনারী
যৌবন- লাবনী অঙ্গে বিথারি।
"
কলসির প্রয়োজন ছিল সেকালে , গুপ্তধন রাখার জন্য । যা ছিল ' যক্ষের ধন ', নামেই বেশি পরিচিত। ছিল তো বটেই, বঙ্কিম চন্দ্রের " দেবী চৌধুরানীর "
প্রফুল্লের ভাগ্যটাই ফিরে গেল, কয়েক ঘড়া মোহর পেয়ে ।
এখন আর এর প্রয়োজন হয় না।
কলসি- দড়ির মিতালিটা ছিল বড় মর্মান্তিক । "কঙ্কাবতীর ঘাট " " বৌঠাকুরানীর হাট "
আরো যে কত শত, হাজার... গলায় কলসি- দড়ি... বেঁধে ডুব দিয়েছে জলে ... তার খবর নেই ...
সে দিক থেকে কলসির যুগ গেছে... ভালই হয়েছে ....

Pictures used for illustrations are collected from Google and free to Reuse with modification.