ধারাবাহিক গল্প: পাখির চোখ (পর্ব ২) - অচিন আগন্তুক
Updated: Aug 28, 2020
পূর্বে..
শিক্ষক অনির্বান ক্লান্ত হয়ে মাঠের বেঞ্চে বসে। অথবা স্ত্রী অপর্ণা আর মেয়ে রিঙ্কুর মান অভিমানের আঁচ থেকে দূরে যেতে চায় সে। বিকালে ছেলের দল খেলতে এলে, ফিরে যায় নিজের অতীতে। একবার খেলার ইচ্ছায় ঢুকে পড়ে খেলার দলে। একটা ম্যাচ যাচাই করে নিতে চায় নিজের পুরোনো খেলার হাত।
এরপর..
বিকাল ৪.৩০। অনি ঘাসে বসে সময় গুনতে থাকে খেলার। নীলু ওপেন করতে যায়। রুপু উল্টো দিকে উইকেট নিয়ে দাঁড়ায়। নিজের ছোটবেলা মনে পড়ে গেল অনির। কুড়িয়ে পাওয়া একটা ব্যাট ছিল খেলার সঙ্গী। সেটা নিয়ে ছিল উন্মাদনা। দলে ব্যাটের মালিকের ছিল স্থায়ী অবস্থান। হাসি পেয়ে গেল অনির। ভালোও লাগলো। মাথা ছাড়ছে ধীরে ধীরে। পেছনে ঘুরে ফ্ল্যাটের ব্যালকনি দেখে নিলো অনি। উত্তাপের আঁচ বাইরে আসেনি এখনো। দরজার পর্দা এলোমেলো উড়ছে। মানে রিঙ্কু এখনো টিভিটা গিলছে গোগ্রাসে।
অন্য দলের একটা বেঁটে করে ছেলে বল করতে এলো। দলের মধ্যে গুঞ্জন, বাঃ, অন্য স্ট্রাটেজি। অপু পরে আসবে। কয়েকটা তো ওভার ওর। ডিফেন্স করে খেলে দিলেই হল। একজন চেঁচিয়ে উঠলো,
- নীলু, মেরে খেল এই ওভারটা। নাহলে অপু এলে পারবি না।
কে এই অপু। সবাই এত ভয় পায় কেন ওর বলকে। ভাবনাটা বেড়ে চললো মাথার মধ্যে। নিশ্চই জোরে করে আর বাচ্চা ছেলে গুলো খেলতে পারে না। সেটাই হবে। তাকেই খেলে দেখতে হবে। প্রথম ওভারটা স্পিন করলো ছেলেটি। নীলু ভালোই খেললো। রুপু একটু নড়বড়ে হলেও সামলে নিলো। প্রথম ওভারে ১৭ রান উঠলো।
- এরপর নিশ্চই অপু আসবে। আবার বলে উঠলো একজন।
- নারে। ওই দেখ। বাসুদেব করছে। কি হলো বলতো।
- অপুর কি চোট আছে নাকি?
- দূর, তাহলে আসতো নাকি খেলতে। বাড়ি থাকলে অবশ্য ওর বাবা সঙ্গে করে বাজারে নিয়ে যাবে। কি জানি?
একটা নিরাশা মনের মধ্যে বারে বারে উঠে আসছে। তাহলে কি দেখা হবে না প্রতীক্ষিত বোলিং? সে নাকি এখানে সেরা বোলার। সবাই নাকি ওকে খেলতে ভয় পায়। পাশের ছেলেটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে ফেলে সে।
- এই শোন। অপু কোন ছেলেটারে?
- ওই যে, দূরে গাছের কাছে রোগা করে দাঁড়িয়ে।
বলেই হাত উঠিয়ে দেখিয়ে দেয়। অনি দেখলো থার্ডম্যানে ফিল্ডিং করছে একটা রোগা মত ছেলে। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হবে উচ্চতা। এমন কিছু আহামরি লাগে না প্রথম দর্শনে। সে মনে বলে ওঠে, এই অপু।
পরের ওভারে এক মিডিয়াম প্রেসার। ভালোই বল করলো ছেলেটা। রুপু উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হলো। এরপর নীলু ডেকে উঠলো রমেন বলে। রমেন ব্যাট করতে নামলো। সেই প্রথম বোলার আবার এলো। স্পিনে রান উঠছে তাও। নীলু ছেলেটা ভালোই খেলে। কিন্তু বাঁধ সাধলো রান নিতে গিয়ে। রমেন ওভারের শেষ বলে রান আউট হলো। নীলু রাগে গজগজ করতে করতে চেঁচালো, কাকু, তুমি এসো।
অনি ব্যাট হাতে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে দেখলো, বিরোধী ক্যাপ্টেন অপুকে ডাকছে। নীলু চাপা গলায় বললো,
- সাবধানে একটু। অপু কিন্তু খুব জোরে বল করে।
মনে মনে অনি হেসে ফেললো। ওই একটা রোগা ছেলে কত আর জোরে বল করবে। অনি কত জোরে বল হেলায় বাউন্ডারির বাইরে উড়িয়ে দিয়েছে। তাও মিডিল স্ট্যাম্পটা গার্ড নিয়ে দাঁড়াবে ঠিক করলো। প্রথম দুটো বল দেখে নিতে হবে। অনেকদিন পরে, নিশ্চই চোখটা সেট হতে সময় নেবে।
- এই ধামড়াটা কে রে নীলু। ভাড়া করে এনেছিস নাকি? অপু ক্রিচের লাইনে পা ঘষতে ঘষতে জিজ্ঞাসা করলো।
- না রে। ওই ফ্ল্যাটে থাকে। প্রতিদিন বিকালে ওই বারান্দাতে দাঁড়িয়ে খেলা দেখে আমাদের। আজ এসে খেলবে বললো।
- বললো আর তুই নিয়ে নিলি। সালা আমার বাপের কাছে বয়স মনে হচ্ছে।
- ছাড় না। একটা ম্যাচ তো খেলবে। আস্তে বল কর একটু।
- কেন বে। আরো জোরে করবো। নাক না ফাটিয়েছি দেখ।
- অপু, করিস না ভাই। সোসাইটিতে বলে খেলাটাই বন্ধ করে দেয় যদি। সোসাইটির অফিসে আড্ডা মারতে দেখেছি আমি।
- ছাড় ছাড়। মাঠটা কি ওর বাবার নাকি। এমন বল করবো, আর খেলতে আসার সাহস পাবে না দেখে নে।
অপু রানআপ নেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলো।
প্রথম বলটা আস্তে এলো মিডিল স্ট্যাম্পে। অনি স্ট্রেটে ঠেলে দিয়ে ২ রান নিলো। না এখনও মরচে পরে যায়নি হাতটা। বেশ আনন্দ লাগলো। অপু ফিল্ডটা আরেকটু সাজিয়ে নিয়ে ছুটে এলো। বাঁহাত থেকে বলটা মাটি ছুঁয়ে মুখের দিকে এগিয়ে আসছে দেখে অনি মাথা নিচু করলো কোনোমতে। চুল ছুঁয়ে বল নিমেষেই উইকেট কিপারের হাতবন্দি। অনি বোঝার আগেই ঘটে গেল পুরোটা। এই রোগা শরীরে এত জোর আসে কোথা থেকে। খারাপের থেকে অবাক লাগছে বেশি। পরের বল। অপুর রানআপ আরো বেড়ে গেছে। তৃতীয় বল বেশ জোরে লেগ স্টাম্পে এল। স্কোয়ারের দিকে বলের মোড়টা ঘুরিয়ে দিল অনি। বাউন্ডারি পেয়ে গেল সে। চতুর্থ বলের আগে অপুকে কিছু বলতে গেল ওদের ক্যাপ্টেন। কথা বলে ঘুরে এলো রানআপ নিয়ে। অনি মিডিল স্ট্যাম্প গার্ড নিয়ে বুকটা ওপেন করে দাঁড়ালো। যাতে লেগে বল এলে একটা বাউন্ডারি মারতে পারে। কিন্তু ঘটলো পুরো বিপরীত। বল অফস্টাম্পের বাইরে পরেছে। অনি বাইরে যাচ্ছে মনে করে অফ এ ঘোরাতে যাবে। আচমকা বল ইনসুইং নিয়ে ঢুকে এলো ভেতরে। অনি সামলাবে কি। তার আগেই মিডিল স্ট্যাম্প মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অনি। এটা কি হলো। প্রায় একহাত ঘুরে এসেছে বল। অনি ভেবেও পায়নি এমন হতে পারে। মাথা তুলে নীলুকে দেখলো সে। এরকম ভাবে কোনোদিনো আউট হয়নি। অপু অদূরে হাসছে তখন।
ক্রমশ..