ধারাবাহিক গল্প: পাখির চোখ (পর্ব ১) - অচিন আগন্তুক
Updated: Aug 12, 2020
দুপুর ৩টে। সকাল থেকে ৪ টে অনলাইনে ক্লাস করিয়ে ক্লান্ত অনির্বান। চোখের সাথে মাথা ধরে একদম যাচ্ছেতাই রকমের ধকল লাগছে। তার ওপর গরমে নাজেহাল অবস্থা। একরকম বাধ্য হয়েই ব্যালকনিতে এসে সিগারেটটা ধরিয়ে ফেললো সে। কয়েকটা সুখটান দিয়েছে মাত্র, ভেতর থেকে কড়া বিদ্রুপ ভেসে এলো,
- এই নাকি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন মিথ্যা কথা বলো?
- না মানে! মাথাটা এতো ধরেছে।
- মাথা ধরলে শুয়ে থাকো, ওষুধ খাও। কিন্তু তাই বলে সিগারেট?
পর্দা সরিয়ে অপর্ণা এসে দাড়ালো পাশে। কটমট করে চেয়ে আছে দেখে অগত্যা অর্ধ সিগারেটের বলি দিতে হল। অপর্ণাকে কথা দিয়েছে সে। আসছে ৪ মাসেই ধূমপান থেকে মুক্ত হবে। কথা ঘোরালো অনি।
- রিঙ্কু কোথায়? ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি?
- না না। আমি না গেলে ঘুমাবে নাকি। গোগ্রাসে টিভিটা গিলছে।
- একটু চা হবে। মাথাটা খুব ধরেছে ক্লাসগুলো করিয়ে।
- আর কি, করছি। তুমিও চা খেয়ে একটু গড়িয়ে নাও। সিগারেট একদম খাবে না কিন্তু।
আদেশের সুরে যেন অনেক অনুযোগ থাকে। সবই মেনে নিতে হবে নিজের কথা ভেবে। আগে হলে চোখ বেঁকিয়ে উড়িয়ে দিতে পারতো অনি। কিন্তু রিঙ্কুর তাদের জীবনে আসার পর থেকে অনেক পরিবর্তন। ব্যালকনিতে ঝুকে দাঁড়িয়ে কমপ্লেক্সের মাঠে চোখ গেল। অল্প অল্প ছেলের জমায়েত হতে শুরু করেছে। প্রতি বিকালে অনেক ছেলে খেলাধুলো করে। অনির্বান রিঙ্কুকে নিয়ে ঘুরতে যায় ওদিকে। মাঠের বেঞ্চে বসে দেখে ছেলেদের ক্রিকেট। একটা সময় ছিল সেও ভেবেছিল ক্রিকেটকে নিজের জীবনের সবকিছু করবে। সবাই বলতো, তার মত ব্যাটসম্যান নাকি এ তল্লাটে কেউ নেই। রবিবার করে খেপ খেলার ডাক পড়তো। হাতে কিছু টাকাও আসতো। অভাবের সংসারে যা আসে, তাই অনেক। সব বদলে গেল বাবা আর বোনের মৃত্যুর পর। কান্না চোখে উৎকণ্ঠা নিয়ে মা তার দিকে তাকিয়ে শুধু বলেছিল, অনু, সংসারটা ভেসে যাবে নাতো। না ভেসে যেতে দেয়নি সে। শুধু ক্রিকেটটাকে সরিয়ে ফিজিক্সটাকে নিজের জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছিল। তারপর কত কঠিন পথ পেরিয়ে.. এসব ভাবতে ভাবতে মাথাটা আরো ব্যাথা করতে লাগলো।
- কই গেলে। এসো। চা ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।
সোফায় বসে চায়ের কাপটা তুলে নিল। সামনে টিভিতে কোনো গানের প্রোগ্রাম হচ্ছে।
- কিরে, মাঠে যাবি ঘুরতে?
রিঙ্কু টিভির দিকে চোখ রেখেই উত্তর দিল, আজ তুমি একা যাও। আমি টিভি দেখবো।
- ওঠ, উঠে পর। সেই স্নানের পর থেকে টিভি দেখছিস। ঘুমাতে আয় বলছি।
- আঃ মা। ঘুম পাচ্ছে না। তুমি যাও তো।
- মার খাবি কিন্তু। উঠতে বলেছি।
মা আর মেয়ের সুমধুর আলাপচারিতায় একদমই নিঃস্বঙ্গ অনি। অগত্যা চুপ করে চায়ে চুমুক দেওয়াই ভালো। চা শেষ করে সদর দরজা খুলতেই অপর্ণার গলা, তুমি আবার কোথায় যাচ্ছ?
- না, একটু হওয়া খেয়ে আসি। মাথাটা ধরে আছে।
- তাড়াতাড়ি এসো। আর সিগারেট খাবে না কিন্তু।
- না না। একদম না।
মা আর মেয়ের আবার যজ্ঞ শুরু হল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সে যজ্ঞের আঁচ পাচ্ছে। ফ্ল্যাটের সামনের রাস্তাটা, মাঠের গেট পেরিয়ে একটা গাছের নিচের বেঞ্চে বসলো অনির্বান। একদল ছেলে তখনো দল তৈরিতে ব্যস্ত। লক্ষ্য খেলা শুরুর আগে তৈরি করে নিতে চায় জেতার রাস্তা। হটাৎ কি ভেবে নেতা গোছের ছেলেটাকে ডেকে নিলো সে।
- এই শুনে যা তো।
হাতে বল নিয়ে ছুঁটে এলো, হ্যাঁ, বলো কাকু।
- কি নাম তোর? কোথায় থাকিস?
- নীলু। ওপাশের পাড়ায় থাকি। ডাকলে কেন বলো জলদি। ওরা খেলতে ডাকছে।
- আমায় দলে নিবি খেলতে।
- তুমি খেলবে। কিন্তু..
- নিবি। কতদিন খেলিনা। একটা ম্যাচ।
- দাঁড়াও, কথা বলে দেখি সবাই কি বলে।
ছুঁটে দলের কাছে ফিরে গেল নীলু। একটা চাপা গুঞ্জনে আলোচনা চললো ২ মিনিট। তারপরেই দূর থেকে হাতের ইশারায় ডাকলো তাকে। অনি উঠে গেল। নীলু বলে উঠলো, জোরে মারবে না কিন্তু। বল হারিয়ে গেলে আর বল নেই।
- না না। আস্তেই মারবো।
- তুমি আমার দলে।
- ওকে ক্যাপ্টেন। আমরা কি ব্যাট না ফিল্ড?
- ব্যাট। তুমি পরে নামবে। আগে আমি আর রুপু নামছি। অপু বল করবে। তুমি অনেকদিন খেলোনি, পারবেনা।
ভেবে হাসি পেল অনির। সেই অনি, যে কিনা বলে বলে ছয় মারতো সব কঠিন বোলারদের। অনেকদিন পরে ব্যাটে হাত দিলেও, ভুলে তো যায়নি। সে কি পারবে না এই বছর ১৪ - ১৫ এর একটা ছেলের বল খেলতে। অল্প হেসেও ফেললো। তাও ক্যাপ্টেন বলেছে। দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো খেলা। মাথাটা হাল্কা হচ্ছে আস্তে আস্তে। ফিল্ড সাজিয়ে খেলা শুরু হলো। নীলুই ওপেন করলো।
ক্রমশঃ..