বেড খালি নেই-অচিন আগন্তুক
সকাল ৮ টা,
জ্বরে বেহুশ ছেলেটা তখনও শুয়ে হাসপাতালের গাছের তলায়;
কিছু মাছি উড়ছে, বসছে।
আঁচল দিয়ে মুখের ওপর থেকে উড়িয়ে দেওয়া;
অশ্রুসজল মা।
প্রচুর লোক, বড় হাসপাতাল; সবাই ব্যস্ত, তটস্থ!
'দিদি, কি হয়েছে?' এলোমেলো প্রশ্ন এপাশে, ওপাশে;
আঁচল চাপা মুখে উত্তর তখন একটাই,
একরাশ উৎকণ্ঠা।
হটাৎ জেগে ওঠা কাঁপা গলা, 'মা, একটু জল;'
জলের বোতল টেনে নিতেই আরেক কন্ঠ; 'এখানেও হলো না বোধহয়;'
'তুমি ডাক্তারবাবুর প্রেসক্রিপশন দেখাওনি?'
উত্তর, 'লাভ নেই, বেড নেই বললে যে!'
'শুনছো, আমাদের ছেলেটা বাঁচবে তো?' মায়ের করুন আর্তি!
এলোমেলো চুলে বাবা অন্য দিকে আরেকবার, অন্য কোনো উপায় যদি!
'মা, কষ্ট হচ্ছে খুব!'
নিরুপায় উত্তরের আশায় অপেক্ষা;
চোখ মুছে মুখে জল ঢেলে দেওয়া,
হয়তো শেষ তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা;
'পাশেই আরেকটা হাসপাতাল, ওখানে যান'
এভাবে ফিরিয়ে দেওয়া, সোজাসুজি কিংবা অন্যভাবে।
ঘিরে ধরে দালালের চোখ, 'চলুন হয়ে যাবে, খরচ হবে..'
প্রতারিত ভাবনায় যবনিকা।
শেষ চেষ্টা, হতেই হবে;
মৃত্যু এসেছে তখন পাশের বেঞ্চে, এক পৌঢ়;
এদিকেও আসবে সে, ফুরিয়েছে বাঁচার প্রয়োজন;
কয়েকদিনে শেষ স্বপ্নের পথচলা,
বাবা মায়ের কোলে ছেলের নিথর দেহ;
অবাক চোখে প্রশ্ন নিয়ে ঝাপসা দৃষ্টি,
ঠান্ডা কপালে শেষ চুমু, মায়ের শেষ আদর;
'আমরা হেরে গেলাম গো,'
সত্যি কি হেরে গেল এক বাবা মা,
নাকি রোগের আগে জিতে গেল নির্মম সমাজ,
কেউ উত্তর চাইবে না, দেবেও না কেউ,
কিন্তু কঠিন মানবিক ধাক্কা থেকেই যায়,
'আরে, এতো করোনা রুগী, ভর্তি করা যাবে না'
আর উত্তর আসবে;
'বেড খালি নেই' ॥