নবাব ও কমিউনিস্ট
Updated: Jan 16, 2022
বাংলাদেশের নিরীহ ময়মনসিংহের চৌধুরী বংশের এক জমিদার আর বাংলার ইতিহাসের নবাব সিরাজউদ্দৌলা-কোথায় যেন মিশে এক হয়ে যায় ।
মুর্শিদাবাদের রাজ্যছাড়া নবাব ...কাশ্মীরের বাঙালি মোহনলাল ...আর এক কমিউনিস্ট-এর আত্মত্যাগ এক সুরে বেঁধে দেয় এতগুলো জীবন ।
নবাব থেকে সর্বহারার লড়াই-সত্যি কি বিচিত্র এ দেশ সেলুকাস !
১৭৫৭ র জুন মাসের এক দুপুর ।
যুদ্ধ্যক্ষেত্রে সেনাপতি মীরমদনের পতন হয়েছে । ছন্নছাড়া সিরাজের বাহিনী । সিরাজউদ্দৌলা ডেকে পাঠালেন তার সেনাপতি মীরজাফরকে ।

প্রিয় মিত্র আরেক সেনাপতি মোহনলালের বারণ শুনলেন না ।
সুযোগ বুঝে সিরাজকে পরদিন সকাল অবধি অপেক্ষা করানো আর ওদিকে ইংরেজদের আক্রমণের
আহ্বাণ -
মীরজাফরের ছল সেদিন পাল্টে দিয়েছিলো বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসের পথচলা।
যুদ্ধক্ষেত্রে তখন নবাব সৈন্যরা দিশাহারা ,প্রমাদ গুনলেন মোহনলাল -তার যে সিরাজের সাথে বিশেষ সম্পর্ক -তার বোন আলেয়া যে সিরাজের স্ত্রী । তার মুর্শিদাবাদের বাড়িতে আছেন সিরাজ পুত্র। যুদ্ধক্ষেত্রে রটিয়ে দিলেন যে মোহনলাল মৃত , সিরাজ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পালালেন ময়মনসিংহ এলাকার বোকাইনগর গ্রামে।
সেখানকার জমিদার শ্রীকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর ছোট ছেলে গোপালকৃষ্ণ নিঃসন্তান -ব্যবস্থা করলেন গোপনে দত্তকের ।
সিরাজের ছেলের আসল পরিচয় জানলেন তিনজন-শ্রীকৃষ্ণ রায় চৌধুরী,মোহনলাল আর মোহনলালের এক বিশস্ত সঙ্গী আর বাকি সবাই জানল যে -সে হিন্দু সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক সন্তান।
নাম বদলে সে হলো যুগলকিশোর রায় চৌধুরী ।
মোহনলালও সন্ন্যাসীর বেশে এসেছিলেন সেই অনুষ্ঠানে ।
যুগলকিশোরের গল্প অন্য একদিন , ফিরে আসি মূল ঘটনায়।
বারবার নাম বদলে ,জমিদারি বদলে-তার বংশধররা আজও বর্তমান -কেউ বাংলাদেশে , কেউ বা ভারতে , কেউ স্টেটস ।
বংশপরম্পরায় তাদের ইতিহাস গোপন করে রয়ে গেছেন পর্দার আড়ালে ।
বঙ্কিমচন্রের লেখায় দেবীচৌধুরী রানীতে যে ভবানী পাঠকের উল্লেখ আমরা পাই -ঐতিহাসিক অমলেন্দু দে তার বই " সিরাজের পুত্র ও বংশধরের সন্ধানে" তে বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও রিসার্চ এর সাহায্যে তার বিশ্বাস জন্মেছিলো যে এই ভবানী পাঠকই মোহনলাল ,কারণ তাদের সময়কাল এক । গল্প ও বাস্তবের প্রেক্ষাপটের অঞ্চল এক আর বঙ্কিমের এক সহপাঠী ছিলেন সেই বংশের ছেলে-আমাদের গল্পের কমিউনিস্ট ।
তার নাম শরদিন্দু দে - পরিচয় লুকোনোর আড়ালে তখন তাদের বংশ পদবি রায়চৌধুরী থেকে বদলে 'দে' , রক্তে নবাবী রক্ত- কিন্তু সেই শরদিন্দু কিনা ভালোবেসে ফেললেন কমিউনিস্ট পার্টিকে । জেল আর গা ঢাকা দিয়ে থাকলেন ২০ বছর ।
কমিউনিস্ট পার্টি তখন নিশিদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানে।
১৯৬৯ নাগাদ ফিরে এলেন ভারতে ।
ত্রিপুরার কমিউনিস্ট পার্টি তাকে থাকতে জায়গা দিলেন আগরতলায় -স্বাধীনতা সগ্রামী এক নবাবী বংশধর জীবনটা কাটিয়ে দিলেন কমিউনিস্ট হয়ে অগোচরে -

শেষ টা করি যদুনাথ সরকারের মন্তব্যে-
"
Thus ended Muslim rule in Bengal ; the foreign master of the sword had become its Kingmaker..."
আরো জানতে পড়তে পারেন অমলেন্দু দের সিরাজের পুত্র ও বংশধরের সন্ধানে....