- হাতেখড়ি- নির্বাচিত লেখা
খেঁদি- উপল পাত্র
Updated: Jul 19, 2020
দুপুর থাকতে শঙ্কর মণ্ডল পৌঁছে গেল তার চাকা লাগান ‘বাক্স-দোকান’ নিয়ে, হাই ইস্কুলের মাঠে। বিকেলে ‘রোবিন্দ জয়েনতির ফানশান' আছে ইশকুলে।
গরমে বিক্রী বাটা বাড়বে জেনে বউ মালতি বলেছিল, “আজ একটু বেশি করে মাল নে যেও।”
শঙ্কর সেইমত একটার জায়গায় জল ভর্তি দুটো জালা, বরফের দুটো চাঁই, বিটনুন আর প্রচুর লেবু নিয়েছে। খেঁদির কথা ফেলতে পারেনা সে।
আশ্চর্য মেয়ে এই মালতি। গায়ে গতরে খাটতে পারে যেমন, বুদ্ধিও ধরে তেমন। স্বভাবটাও মিষ্টি।
ইস্কুলের মিড ডে মিল রান্নার কাজটা সেক্রেটারীকে বলে কয়ে ঠিক বাগিয়েছে। তারপর লোকের বাড়ি বাড়ি মুড়িভাজা, ধানসেদ্ধ করার মত বারমেসে কাজ তো আছেই। তারই পরিশ্রমে বলতে গেলে শঙ্করের কোঠাবাড়ি উঠছে। মেয়ে দুটো ইস্কুলে পড়ছে। অথচ কালো আর নাক বোঁচা বলে তাকে বিয়ে করতে চায়নি শঙ্কর। ঘটক বলেছিল ‘ইস্ত্রি ভাগ্যে ধন রে তোর শঙ্কর, এই বলে রাখলুম।
হাতের নোক্ষি পায়ে ঠেলিস নি।’ তা ঘটকের কথা মিথ্যে হয়নি। বিয়ের ক’বছরের মধ্যে তার অবস্থা ফিরতে শুরু করেছে। আদর করে তাই শঙ্কর বৌকে ‘খেঁদি’ বলে ডাকে।
ইস্কুলের মাঠে তেরপলের বিরাট ছাউনি পড়েছে। গায়ে ফোস্কা পড়া ভ্যাপসা গুমোট, গাছের পাতা নড়েনা। মানুষের ভীড়ে গরম যেন আরও বেড়েছে। ওদিকে চা নিয়ে বলাই, ঘুঘনি নিয়ে কাশী, থার্মকলের বাক্সে পেপসি নিয়ে হারু এসে হাজির। আইসক্রিমের ঠেলা নিয়ে বসির একটু তফাতে।
সবারই বিক্রী টুকটাক, কেবল দম ফেলার সময় পাচ্ছে না শঙ্কর। আরে বাবা তেষ্টার সময় ঠান্ডা শরবতের বদলি আছে নাকি কিছু। এক একজন দু-তিন গ্লাস করে ঠান্ডা শরবত খাচ্ছে। এমনকি ইস্কুলের মাস্টার যতীনবাবুও এক সময় এসে দু-গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে গেছে। শঙ্কর অবশ্য তার থেকে পয়সা নেয়নি। এক ঘন্টার মধ্যেই বরফ শেষ। কী ব্যাপার শঙ্কর নিজেও বুঝতে পারছে না। বরফ-কল থেকে আরও বরফ আনাল, পয়সা দিয়ে দু জালা জলও আনাতে হল। এত বিক্রি হবে ভাবেনি শঙ্কর।
রাতে মালতি জিজ্ঞেস করলে, "শরবত বিক্রি কেমন হোল গো?" " আটশো পঁয়ত্রিশ টাকার। ভাবিনি এত বিক্রি হবে। সবই রোবি ঠাকুরের জন্যে।"

শঙ্কর ভক্তিভরে দু-হাত কপালে ঠেকায়।
"কিছুটা আমার জন্যেও।" "তোমার জন্যে, মানে?"
"ইস্কুলের দুটো টিউকলই বিগড়ে দিয়ে এসেছিলাম যে।"
****************