top of page

ছান্দসিক // সৌম্য তথাগত

Updated: Mar 6



পিসে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যখন নোংরা রসিকতা করা হতো, তখন ভাবতাম, এই মানুষগুলো জানেন না সমুদ্রের সামনে দাড়িয়ে মূত্রত্যাগ করলেই ,সে বিশালকায় সমুদ্র অপবিত্র হয়ে যায়না। বরঞ্চ তাদেরই রুচি ও জ্ঞানের পরিচয় প্রকাশ পায়। সেই কারণে আমি অফিসকে আপিস বলি--- আপসের জায়গা।আজ ইচ্ছে করছে রবীন্দ্রনাথ আর তার ছন্দের প্রতি যে নিটোল প্রেম , সে নিয়ে কিছু বলতে।


বাংলায় ছন্দরীতির মধ্যে একটি কলাবৃত্ত রীতি। রুদ্ধদলকে যে সর্বত্র দ্বিমাত্রিক রাখা সম্ভব, রবীন্দ্রনাথ প্রথম যথার্থ প্রয়োগ করেন মানসী পর্বে । মধুসূ্দন অমিত্রাক্ষর ছন্দ আবিস্কার করেন।কিন্তু 'পয়ার' বা মহাপয়ার সে যে প্রকারই হোক আমার তাকে " মেকানিক্যাল" মনে হয়।

A SKETCH OF TAGORE BY SIR WILLIAM ROTHENSTEIN, DATED 1912

মুক্তক ছন্দের প্রবর্তক মধুসূদন অথবা কালিপ্রসন্ন কে দিতে পারিনা , তা দিতে পারি গিরিশ্চন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথকে। মুক্তক যেন পয়ার এবং মহাপয়ার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক ভাবপ্রকাশে সক্ষম হয়েছে।

অনেকেই দেখি গদ্য কবিতা লেখেন আজকাল।তারা এও বলেন গদ্যকবিতায় ছন্দ নেই। তারা মূর্খের জগতে বাস করছেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন গদ্যকাব্যেও একটা আবাঁধা ছন্দ আছে।বঙ্কিম অথবা রাজকৃষ্ণ রায় এর পুরোধা হলেও এর যথার্থ সূচনা হয় রবীন্দ্রনাথের পুনশ্চতে । এ ছাড়া যেমন কড়ি ও কমল-এ পাই শেক্সপিয়রীয় রীতিতে লেখা সনেট।

বীন্দ্রনাথ ছন্দের জন্যে ছন্দকে ভাঙেনি , ভেঙেছে ভাবের জন্যে। এই কারণেই তিনি শ্রেষ্ঠ । তিনি বলেছেন ---------

"কাব্য পড়তে গিয়ে যদি অনুভব করি যে ছন্দ পড়ছি, তাহলে সেই প্রগল্ভ ছন্দকে ধিক্কার দেব। মস্তিষ্ক হৃৎপিণ্ড পাকস্থলী অতি আশ্চর্য যন্ত্র, তার সৃষ্টিকর্তা তাদের স্বাতন্ত্র ঢাকা দিয়েছেন। দেহ তাদের ব্যবহার করে প্রকাশ করে না । ...শরীরে স্বাস্থ্যের মতই কবি ছন্দকে ভুলে থাকে, ছন্দ যখন তার যথার্থ আপন হয়।"

শেষ করছি তারই এক গদ্যকবিতা দিয়ে । কত সহজে তিনি বাহ্যিক রূপ থেকে ছন্দকে মুক্তি দিলেও ভাবের সাথে ছন্দ কে সাঙ্গ করছেন--------


"গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম সুন্দর

সুন্দর হল সে।

তুমি বলবে এ যে তত্ত্বকথা

এ কবির বাণী নয়।

আমি বলব এ সত্য

তাই এ কাব্য। "





0 comments
bottom of page